মানবাধিকার নামাজ-রোজার মতই ধর্মীয় অনুশাসন। এটা ত্যাগ করা যাবে না। প্রকৃত মুসলমানরা মানুষের অধিকার বিনষ্ট করে না, করতে পারে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পশ্চিমাদের মানবাধিকার নয়, এদেশে ইসলামী আদর্শের মানবাধিকার চর্চা করতে হবে। আমরা পশ্চিমাদের থেকে ধার করে মানবাধিকার নিয়ে আসি নাই। আমাদের মানবাধিকারের শিক্ষা দিয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) যিনি মক্কা বিজয়ের পর মানবিক বিবেচনায় সকল কাফেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমিরুল মোমিনীন হযরত ওমর (রা) তার নিজের উট আরোহীকে সফরকালে উটের বসিয়ে নিজে উটের রশি টেনে মুসলিমদের মানবাধিকারের শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা মুসলিমরা সেই মানবাধিকার চর্চা করি। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘হিউম্যান রাইটস এইড বাংলাদেশ’- কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘হিউম্যান রাইটস এইড বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ. এফ. এম আব্দুর রহমান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ। আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেল ড. গোলাম রহমান ভূইয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ- সম্পাদক ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেল সাইফুর রহমান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নুর খান লিটন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল হালিম, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বায়তুন নুর জামে মসজিদের খতিব জাকারিয়া নুর, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এস. এম কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক প্রমুখ।
বিশেষ অতিথি বিচারপতি এ. এফ. এম আব্দুর রহমান বলেন, আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনরূপে সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা মানুষকে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে দেয় না। জাতিসংঘ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র গুলো নির্দিষ্ট আইন ও নিয়মে চলতে হয়। কিন্তু বিশ^ মোড়লের চেয়ারে বসে থাকা মোড়লরা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের আগ্রসন ইজরাইল যেভাবে হত্যা করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সে বিষয়ে নজর দিচ্ছে না। সাদ্দামকে হত্যা করে ইরাকে যে মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে সেবিষয়েও নিরব থাকতে দেখা গেছে। বিশ^ মোড়লদের দিকে না তাকিয়ে থেকে আমাদের দেশে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতি বজায় রেখে অতিতের মত শান্তিতে বসবাস করবো। আমাদের সম্প্রীতি অটুট থাকবে এবং রাখতে হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মাথাও খেয়েছে। তারা এমনভাবে সেখানে প্রচার করেছে বাংলাদেশে জামায়াত বেড়ে যাচ্ছে হিন্দুদের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটবে কিন্তু না শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তিনি নিজে শেখ হাসিনার নিদের্শে এদেশে ঢাকেশ^রী মন্দির, জয়কালী মন্দির সহ ঢাকা শহরের সকল মন্দির ভাংচুর করেছে এবং হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করেছে। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আবারো এদেশে দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চেয়েছে সেখানে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকায় হিন্দুদের সম্পদ নিরাপদ রয়েছে। হিন্দুদের উপর কেউ আক্রমণ করতে পারেনি। তারা হিন্দুদের মন্দির ও বাড়ি-ঘর পাহারা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ এদেশে আর কেউ করেনি।
সেমিনারে বক্তরা বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭২ -৭৫ আওয়ামী দুশাসনে র্দুভিক্ষের সৃষ্টি হয়। সে সময় আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করে মানুষের অধিকার হরণ করেছে। পরবর্তীতে ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা পুরো বাংলাদেশকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আয়না ঘর সৃষ্টি করে সেখানে বিরোধী দলমতের লোকদের বন্দী করে রেখেছিল। গুমের শিকার পরিবার গুলো অনেকেই আজও তাদের প্রিয়জনের সন্ধান পায়নি। মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে জামায়াত ইসলামী, বিএনপি সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে বিচারিক হত্যা করেছে। ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্য করেছে। বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনের নামে জাতির সাথে তামাশা করেছে। তরুণ প্রজন্ম আজ কিভাবে ভোট দিতে হয় জানতে পারেনি। ভোট মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছিল শেখ হাসিনা। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ এই দুই নেতার বিরুদ্ধে কখনো কেউ এক টাকা দুর্নীতির অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। সেই মহান নেতাদের সাজানো মামলায় ফরমায়েশী রায়ে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, গোলাম আজম, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সহ বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আরমান, বিগ্রেডিয়ার আজমী আয়না ঘর থেকে ফিরে আসলেও শিবির কর্মী ওলি উল্লাহ, আল মোকাদ্দিস বিল্লাহ সহ অসংখ্য নেতাকর্মীর সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। এদের কেউ জীবিত আছে কিনা সেটাও কারো জানা নেই। আবাবিল পাখির পূর্ণ আবির্ভাব হয়ে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণকে মুক্ত করেছে আওয়ামী লীগের হাত থেকে। জাহেলিয়াতের যুগ আর আওয়ামী লীগের যুগের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না বলেও মন্তব্য করেন বক্তরা।