বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, পবিত্র মাহে রমযান গুনাহ মাফের মাস। এ মহিমান্বিত মাসে বেশি বেশি ইবাদাত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মুমিন জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্য হতে হবে। যে ব্যক্তি রমযান মাস পেল অথচ গোনাহ মাফ করে নিতে পারলো না সে অবশ্যই ভাগ্য বিড়ম্বিত। তাই আমাদেরকে পবিত্র মাহে রমযানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যথাযথভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে। এ মাসে যাকাত প্রদান করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখা প্রতিটি সামর্থবান মুসলমানের অবশ্যই কর্তব্য। তিনি যথাযথভাবে যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আর্ত-মানবতার কল্যাণে কাজ করার আহবান জানান।
রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ডেমরা থানার উদ্যোগে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য ও ডেমরা থানা আমীর হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির। আরোও উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা আলী হোসাইন, এম রহমান, আবু তালেব, মীর্জা মেসবাহ উদ্দীন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন,যাকাত ইসলামের ৫টি ইমারতের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইমারত। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হল নামাজ ও যাকাত। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ৩২ স্থানে যাকাতের কথা উল্ল্যেখ করা হয়েছে এবং ঈমানদারদের জন্য অশেষ রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যেখানে মু’মিনের গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে অপরিহার্যভাবেই নামাজের পরে যাকাতের কথা এসেছে। যাকাত শরীয়তের এমন এক অকাট্য বিধান যে, কোন ব্যাক্তি যদি যাকাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। এমনকি রাসূল সা. এর ওফাতের পরে যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর রা: যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন। তাই যথাযথভাবে যাকাত প্রদান ও শরিয়ত নির্ধারিত ৮ টি খাতে তা ব্যায় নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরোও বলেন, রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস, তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির মাস। তাই নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জন করায় মাহে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা। এ মাসে মহান আল্লাহ বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ আল কুরআন নাজিল করেছিলেন বলেই এ মাসের মর্যাদা অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি। কুরআনের আলোকে সমাজ পরিচালিত হলে সমাজে অন্যায়, অনাচার, জুলুম, নির্যাতন থাকত না। যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গী নিতে গিয়ে পদতলে পিষ্ঠ হয়ে মানূষের মৃত্যুর মিছিল দেখা যেতনা বরং সমাজপতি বা রাষ্ট্রনেতা ধনীদের থেকে যাকাত আদায় করে তা অভাবী, গরীব-দূ:খী জনগনের দ্বারে দ্বারে পৌছিয়ে দিত। ফলে দারীদ্র বিমোচনহত এবং রাষ্ট্রে সামাজিক বৈষম্য ও ধনী-গরিবের ব্যবাধান থাকতো না। তাই আমাদের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কুরআনের আলোকে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সমাজের দারিদ্রপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের ক্ষুদ-পিপাসার দুঃখ-কষ্ট অনুধাবন করার জন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর সিয়ামের বিধান দিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসে যাকাত, সদকা ও দানের অধিক ফজিলত প্রমাণ করে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাই হচ্ছে আর্ত-মানবতার কল্যাণ ও সেবা। জাগতিক জ্ঞান থাকা স্বত্ত্বেও শুধুমাত্র কুরাআনের জ্ঞানের অভাব ও শুণ্যতায় জাতি আজ বিভ্রান্ত এবং সমাজ বিপর্যস্ত। জামায়াত সমাজ ও রাষ্ট্রকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে চায়। তিনি দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আব্দুস সবুর ফকির বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ চরম হুমকীর মুখে। জনগনের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষের সাধারন মৃত্যুর কোন নিশ্চয়তা নাই। দ্রব্যমুল্যের যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে প্রান্তিক, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।